ইস্তাম্বুল থেকে দিনে দিনে ভ্রমন করে ইস্তাম্বুলে ফেরার মতো এতটি চমৎকার গন্তব্য বুরসা শহর। তুরস্কের অন্যতম সুন্দর শহর বুরসা। শহরের ভেতরে অনেকগুলো পার্ক ও শহরের পাশে ঘন সবুজ বন থাকার কারণে বুরসাকে ইশিল বুরসা বা গ্রীন বুরসা নামেও ডাকা হয়। মর্মর সাগরের এক দিকে ইস্তাম্বুল আর আরেক দিকে বুরসা। ফলে ওয়াটার বাসে করে বুরসা যাওয়াও এক অন্যরকম মনোমুগ্ধকর যাত্রা। এছাড়া গেবজে ওসমান গাজী ব্রিজ হয়ে সড়ক পথেও বুরসা যাওয়া যায়।
তুরস্কের চতুর্থ বৃহত্তম শহর বুরসা। ওলুদা পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের এই শহরে রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন। কারণ ওসমানী সাম্রাজ্যর প্রথম রাজধানী ছিলো বুরসা। কি দেখবেন কি খাবেন বুরসায়? আজ সে বিষয়েই আলোচনা হবে।
১. মসজিদ:
বুসরায় রয়েছে ওসমানী আমলে নির্মিত অনেক প্রাচীণ ও ঐতিহাসিক মসজিদ। এর মধ্যে সবচেয়ে বিখ্যাত উলু জামি বা গ্রেট মসজিদ। ১৩৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মসজিদটি এখনো টিকে আছে সগৌরবে। ২০ গম্বুজ ও ২ টি মিনার সদৃশ্য উলু জামির ভেতরে রয়েছে অনেক প্রাচীন ক্যালিওগ্রাফি, কাবা শরীফের গিলাফ, নক্ষত্রের ডিজাইন আকা প্রাচীন মিম্বারসহ আরো অনেক নিদর্শন। এছাড়া বুসরার বিখ্যাত মসজিদগুলোর মধ্যে রয়েছে আমির সুলতান মসজিদ, ইয়েশিল মসজিদ, মুরাদিয়া মসজিদ, বেয়াজিত মসজিদ, ওরহান জামিসহ আরো অনেক চোখ জুড়ানো মসজিদ।
২. কারাভ্যান সারাই:
প্রাচীন পৃথিবীর বানিজ্য পথ সিল্করুটের পাশে অবস্থিত বুরসা প্রাচীনকাল থেকেই বানিজ্য কেন্দ্র হিসেবে বিখ্যাত। ওসমানী আমলে সুলতানরা বুরাসায় অনেকগুলো ক্যারাভান সারাই বানিয়েছে যা স্থানীয়ভাবে হান নামে পরিচিত। এই সব হানে বানিজ্য কাফেলা আসত। ব্যবসায়িক পন্য লেনদেন করতো, বিশ্রাম নিতো। এরকম বিখ্যাত হানের মধ্যে রয়েছে খোজা হান, ইপেক হান, পিরিঞ্চ হান ও ইলদ্রিম বাজার বেদেস্তান। সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা হয়েছে এই হানগুলো। এখানে এখন বিশাল মার্কেট গড়ে ওঠেছে। অনেকটা ইস্তাম্বুলের গ্রাণ্ডবাজারের মতো।
৩ জাদুঘর
বুরসায় রয়েছে দেখার মতো অনেকগুলো জাদুঘর। সবচেয়ে আধুনিক জাদুঘর হলো বুরসা প্যানোরমা জাদুঘর। এখানে বিশাল গ্যালারীতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে কিভাবে বুরসা শহর জয় করেছিল ওসমানীরা। এতোটাই জীবন্ত এই প্যানোরমার ছবিগুলো মনে হবে যে কিছুক্ষনের জন্য কয়েক শতাব্দি পেছনে চলে গেছেন। এছাড়া বুরসার বিখ্যাত জাদুঘরের মধ্যে রয়েছে বুরসা আর্কিওলজিক্যাল জাদুঘর, বুরসা কারাগজ জাদুঘর, ইজনিক জাদুঘর, বুরসা আতাতুর্ক জাদুঘর, বুরসা মিউজিয়াম অব তুর্কিশ এন্ড ইসলামিক আর্ট, মিউজিয়াম অব অটোমান হাউস ও তুফাস মিউজিয়াম অব কারস এন্ড আনাতোলিয়ান ক্যারিজ।
বুরসার আরেকটি বিখ্যাত স্থান হলো বুরসা ওরহান জামি ও কুল্লিয়ে। শহরের অনেক উচু একটি পয়েন্টে অবস্থিত এই মসজিদের পাশেই রয়েছে ওসমানী সুলতান বংশের প্রতিষ্ঠাতা ওসমানের ছেলে ওরহানের সমাধী। সমাধীর পাশে রয়েছে ঐতিহাসিক বুরসা টাওয়ার। টাওয়ারের সামনে দাড়িয়ে বুরসা শহরের প্যানারোমিক ভিউ দেখা উপভোগ করা যায়। এরকম আরেকটি সমাধীস্থল মুরাদিয়ে কুল্লিয়েছি। উসমানী রাজবংশের অনেকের কবর রয়েছে এখানে।
বুরসা শহরের অদূরে আরেকটি দর্শনীয় জায়গা ঐতিহাসিক চিনার গাছ। ওসমানী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাকালে এই গাছটি রোপন করা হয়। কয়েকশত বছর ধরে গাছটি এখনো টিকে আছে। শাখা-প্রশাখায় বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই গাছটি দেখতে প্রতিদিন অনেক পর্যটক আসে।
খাবারের কথা আসলে প্রথমেই আসবে বুরসার বিখ্যাত ইস্কান্দর কাবাবের নাম। এছাড়া ইনেগল কোফতে, পিডেলি কোফতে কামাল পাশা তাতলি নামক মিষ্টান্ন, জেভিজলি লোকুম, জেনদেরে বাকলাভা, দউন হালুয়ার সুনাম রয়েছে দেশজুড়ে।
কম বাজেটের মধ্যেও ঘুরে আসতে পারেন ওসমানী সালতানাতের এক সময়ের রাজধানী ও সুন্দর শহর বুরসা থেকে। ইতিহাস ও আধুনিকতায় মিশেল সবুজ শহর বুরসা।