ইস্তাম্বুলে আগত পর্যটকদের অন্যতম আগ্রহের স্থান গ্রান্ড বাজার। গ্রান্ড বাজার এতো বড় এক শপিং সেন্টার যে প্রথমবার কেউ একা প্রবেশ করলে পথ হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা অনেক বেশী। ৩০,৭০০ বর্গমিটার এলাকার উপর গড়ে ওঠা এই মার্কেটে ৬৭ টি রাস্তার উপর ৪ হাজার দোকান রয়েছে। ১৮ টি প্রবেশ পথ আছে এই মার্কেটের। এছাড়া নামাজের জন্য ৫ টি মসজিদ ও ৭ টি ঝর্ণা রয়েছে। মার্কেটের পাশে রয়েছে ১০ টি মাদ্রাসা ও ১৭ টি সরাইখানা।
এখানে একেক রাস্তার উপর একেক ধরনের জিনিসপত্রের দোকান রয়েছে। যেমন রাস্তাকে তুর্কিশ ভাষায় বলে জাদ্দে। কালপাকচিলার জাদ্দেতে পাওয়া যাবে সব ধরনের স্বর্ণের গহনা, সাহাফলার জাদ্দেতে দেখা মিলবে রং-বেরংয়ের কার্পেটের, পেরদেজিলার জাদ্দেতে চামড়া তৈরী জিনিসপত্রের দোকানের সারি। গ্রান্ড বাজারের প্রধান পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে তুর্কিশ কফি, হাতে বানানো তৈজসপত্র, বাহারী মশলা, তুর্কিশ পোষাক, হিজাব, জুতো। কী পাওয়া যায় বলার চেয়ে কী নাই তা বলাই হয়তো সহজ।
১৪৫৩ সালে ইস্তাম্বুল বিজয় করার পর ইস্তাম্বুলকে বানিজ্যের প্রধান কেন্দ্র বানানোর নিমিত্তে ফাতিহ সুলতান মুহাম্মদ ১৪৫৫ সালে এই মার্কেট নির্মাণের কাজ শুরু করেন। টেক্সটাইল ও গহনার বাণিজ্যকে টার্গেট করে বানানো গ্রান্ড বাজারে নাম ছিল তখন জেওয়াহির বেদেস্তানি বা মণিমুক্তার মার্কেট। ১৪৬১ সালে মার্কেটের প্রধান অংশ বেদেস্তানের নির্মাণ শেষ হয় এবং সুলতান এটিকে আয়া সোফিয়া মসজিদের নামে ওয়াকফ করে দেন। অর্থাৎ এই মার্কেটের অর্জিত ভাড়া আয়া সুফিয়া মসজিদের ওয়াকফ তহবিলে চলে যাবে।
তার্কিশ ভাষায় গ্রান্ড বাজারকে কাপালি চারশি বলা হয়। মানে তালাবদ্ধ মার্কেট। এই মার্কেটে পোশাক থেকে শুরু করে মহামূল্যবান গহনা ক্রয়-বিক্রয় হতো। আর একবার এই মার্কেটে কোন কিছু প্রবেশ করলে তার নিরাপত্তার সম্পুর্ণ দায়-দায়িত্ব বহন করতো ওসমানী সালতানাত। রাতের বেলা মার্কেট বন্ধ করে ফেলা হতো। বিশেষ সিকিউরিটি গার্ডরা মার্কেটের প্রহরায় নিযুক্ত থাকতো। রাতে কারো মার্কেটে প্রবেশের অধিকার ছিল না। মার্কেটে প্রবেশ করতে হলে রাজপ্রাসাদ থেকে অনুমতিপত্র নিয়ে আসা শর্ত ছিলো।
গ্রান্ডবাজারের এক কোণে হঠাৎ দেখা মিলবে ওসমানী সুলতানদের সাথে। অবিকল সুলতানদের পোষাক পড়িয়ে, তরবারী হাতে দিয়ে, সিংহাসনে বসিয়ে ফটোসেশন করার জন্য বেশ কিছু দোকান রয়েছে। চাইলে কিছু টাকা খরচ করে আপনিও হতে পারেন কয়েক মিনিটের সুলতান।
শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সেবা দিয়ে আজো আবেদন ধরে রেখেছে ভিশনারী সুলতান ফাতিহর প্রতিষ্ঠিত এই মার্কেট । প্রতিদিন গড়ে ৪ লক্ষ লোক ভ্রমণ করে এই মার্কেটে। প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের শাসনামলে মার্কেটটি সংস্কারের মাধ্যমে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংযুক্ত করা হয়েছে। সুলতান আহমেদ মসজিদের সামনে থেকে ট্রামওয়েতে ওঠলে কয়েকটি স্টেশন পরেই বায়েজিত-গ্রাণ্ডবাজার স্টেশন। ইস্তাম্বুলে বেড়াতে আসলে অবশ্য দর্শনীয় একটি স্থাপনা এটি।