দ্যা গ্রেট মস্ক অফ বুরসা - বুরসা উলু জামি

tog
দ্যা গ্রেট মস্ক অফ বুরসা - বুরসা উলু জামি
Nov. 7, 2024

১৩৯৬ সাল। বুলগেরিয়ার নিকোপোলিশ প্রান্তরে মুখোমুখি মুসলমান খ্রিষ্টান ক্রুসেডার বাহিনী। একদিকে ওসমানী সুলতান ইলদ্রিম বাইজিদের বাহিনী অপরদিকে পুরো ইউরোপের খ্রিস্টান রাজাদের বাহিনী। এক অসম কঠিন লড়াই। জিহাদের ময়দানে দুটি হাত তুলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইলেন সুলতান আর মানত করলেন এই যুদ্ধে যদি মুসলমানরা জয় লাভ করে তিনি ২০ টি মসজিদ নির্মাণ করবেন।

 

কঠিন এক লড়াইয়ের পর ওসমানীরা যুদ্ধে জয় লাভ করে। কয়েকশত বছরের জন্য পূর্ব ইউরোপে ইসলামের পতাকা উত্তোলিত হয়। পরবর্তীতে সুলতান ব্যস্ত হয়ে পড়েন বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনোপল জয়ের প্রস্তুতি নিতে।

 

এদিকে এক আলেম পরামর্শ দেন ২০ টি মসজিদের স্থলে যদি ২০ টি গম্বুজ বিশিষ্ট বড় একটি মসজিদ নির্মান করেন তবে মানত পূর্ণ হয়ে যাবে। তবে তাই হোক। ওসমানী সাম্রাজ্যের অন্যতম বড় শহর বুরসায় মসজিদ নির্মান শুরু হয়।

 

কিন্তু বাধ সাধে এক খ্রিস্টান প্রজা। মসজিদের জন্য নির্বাচিত পাহাড় চূড়ায় তারও এক খন্ড জমি আছে। কোন মতেই সে জমি মুসলমানদের মসজিদের জন্য দিবে না। সুলতান চাইলেই জোর করে জমি নিতে পারতেন। তিনি সেটা করেন নি। বহু স্বর্ণমুদ্রার বিনিময়ে জমি বিক্রয় করলেও খ্রিষ্টান শর্ত জুড়ে দেন যে তার জায়গায় নামাজ পড়া যাবে না। সেই শর্ত মেনে নেন সুলতান। বুরসা গ্রেট মসজিদের ভেতরেই বসানো হয় একটি অজু খানা। এই অজুখানার উপরে ছাদ দেয়া হয় নি। কাচের গ্লাস দিয়ে ঢাকা হয়েছে এই জায়গাটি। এখানেই ছিলো খ্রিস্টান প্রজার জমি। ফলে তার জায়গায় মুসলমানরা অজু করে, বাকী স্থানে নামাজ পড়ে।

 

বিশ্বের সবচেয়ে প্রাচীন সুন্দর মসজিদগুলোর মধ্যে বুসরা গ্রেট মসজিদ অন্যতম। প্রকাণ্ড এই মসজিদের রয়েছে ২০ টি গম্বুজ দুটি সুউচ্চ মিনার। মসজিদের ভেতর কাঠের তৈরী প্রাচীন মিম্বারে নকশা করা আছে মহাকাশের বিভিন্ন গ্রহ নক্ষত্রের। সেই সময়ে মুসলমান বিজ্ঞানীদের এস্ট্রানমিতে কত গভীর জ্ঞান ছিলো তার প্রমান এই মিম্বার। মসজিদের ভেতরে ঝুলানো আছে কাবার গিলাফ। তুরস্কের সুলতান খিলাফাতের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই গেলাফ হাদিয়া হিসেবে পেয়েছিলেন।

 

মসজিদের ভেতর ওসমানী স্টাইলের ১৯২ টি প্রাচীন ক্যালিগ্রাফি যে কারো নজর কেড়ে নেবে। কোরানের আয়াত, হাদিস, আল্লাহর ৯৯ নাম মহাবনীর বিভিন্ন নাম শৈল্পিক সৌন্দর্যে ফুটিয়ে তুলা হয়েছে মসজিদের ওয়ালে।

 

প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটক দেখতে আসেন মসজিদটি। কয়েকশত বছরের প্রাচীণ এই মসজিদের সেজদায় রয়েছে এক ভিন্ন রকমের প্রশান্তি। ইসলামের স্বর্ণযুগের একটি স্বাক্ষর বুরসার গ্রেট মসজিদ। বুরসা ভ্রমনের সময় এটি অবশ্য দর্শনীয় এক স্থান।