১৯১৮ সাল। ওসমানী সালতানাতের শেষ স্বাধীন সুলতান দ্বিতীয় আবদুল হামিদ শুয়ে আছেন তাঁর মৃত্যুশয্যায়। ৩৬ বছর ধরে আগলে রাখা বিশাল সাম্রাজ্যকে তছনছ করে ফেলছে বিদ্রোহী ইয়ং তুর্কের তিন জেনারেল। কারাবন্দী সুলতান বিষাদ ভরা নেত্রে তাকিয়ে আছেন বফফরাসের নীল জলরাশির দিকে। বসফরাসের তীরের এক সুরম্য প্রাসাদের তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছে ৬ বছর ধরে। সেই প্রাসাদেরই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুলতান আবদুল হামিদ। সুরম্য সেই প্রাসাদের নাম বেইলার-বে প্রাসাদ।
সুলতানের জিন্দানখানা হিসেবে ব্যবহৃত এই বেইলার-বে প্রাসাদটি এক সময় ছিল ওসমানী সুলতানদের গ্রীষ্মকালীন অবকাশ কেন্দ্র। বেইলার-বে মানে হলো লর্ড অব লর্ডস। সুলতান হামিদের চাচা ও পূর্ববর্তী সুলতান আবদুল আজিজ ১৮৬৫ সালে এই প্রাসাদটি নির্মাণ করেন।
বসফরাসের তীরে ইস্তাম্বুলের এশিয়ান সাইডে অবস্থিত এই প্রাসাদটি তার অতুলনীয় সৌন্দর্য ও চমৎকার লোকেশনের জন্য বিখ্যাত। এই প্রাসাদে রয়েছে ৬ টি রাজকীয় বৃহদাকার কক্ষ ও ২৬ টি ছোট কক্ষ। সব কক্ষ থেকেই উপভোগ করা যায় বসফরাসের অপরূপ সৌন্দর্য। প্রাসাদের হল রুমে রয়েছে ফ্রান্স থেকে আনা বিশালকার ঝাড়বাতি। প্রাসাদের সামনে ঝর্ণা। প্রাসাদের পেছনে বসফরাসের উপর ২ টি প্যাভিলিওন আছে। একটি পুরুষদের জন্য, আরেকটি মেয়েদের। এখানে আরো কাছ থেকে বসফরাস দেখা যায়।
এই প্রাসাদটি পরে ব্যবহার করা হতো সুলতানের রাজকীয় অতিথিদের আবাসন হিসেবে। বিশ্বের অনেক বিখ্যাত রাজা-বাদশাহ ও যুবরাজরা ওসমানী সুলতানের রাজ অতিথি হয়ে বেইলার-বে প্রাসাদে বাস করেছেন।
১৮৬৯ সালে ফ্রান্সের সম্রাজ্ঞী ইউগেনী সুয়েজ খাল উদ্বোধন করতে যাওয়ার পথে বিশ্রাম নেন এই প্রাসাদে। প্রাসাদের জানালার ডিজাইন তাঁর এতোটাই পছন্দ হয় যে তিনি এর একটি কপি সাথে নিয়ে যান। পরে প্যারিসের তুইলেরিস প্রাসাদের নিজের শয়ন কক্ষের জানালা হুবহু এই ডিজাইনে তৈরী করান।
এছাড়া ইরানের সম্রাট নেসার উদ্দিন শাহ কাজার, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের যুবরাজ ডিউক অব উইন্ডসর আরো অনেক রাজকীয় মেহমান এই প্রাসাদের আতিথিয়েতা গ্রহণ করেন।
প্রাসাদটি এখন জাদুঘর। যে কেউ টিকেট কেটে গাইডের সহায়তায় ঘুরে দেখতে পারে প্রাসাদটি। উসকুদার থেকে মাত্র ১০ মিনিটের পথ বেইলার-বে। ইস্তাম্বুল ঘুরার যে কোন সুযোগে ঘুরে আসতে পারেন বেইলার-বে প্রাসাদ।
অথবা আপনি যদি পর্যটক হয়ে থাকেন তাহলে অটোমান ট্রাভেলস এর সাথে যোগাযোগ করুন। অটোমান ট্রাভেলস আপনাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত আছে ।