আয়া সোফিয়া ইস্তাম্বুলের আসা সব ধর্মের পর্যটকদের প্রথম ও প্রধান আকর্ষণ। বিশ্বের সবচেয়ে পুরনো ও এখনো অক্ষত স্থাপনার মধ্যে আয়া সোফিয়া অন্যতম। আয়া সোফির বয়স যেমন অনেক তেমনি অনেক ইতিহাসের সাক্ষী এই মসজিদ। আয়া সোফিয়া কখনো ছিলো গির্জা, কখনো মসজিদ, কখনো আবার জাদুঘর। তবে আবার আযান শুরু হয়েছে আয়া সোফিয়ায়। আবার মসজিদের রুপান্তরিত হয়েছে আয়া সোফিয়া। তবে সব ধর্মের দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে এই বিশ্ব ঐতিহ্যকে।
আজ আলোচনা করবো আয়া সোফিয়ার ইতিহাস ও বিশেষত্ব নিয়ে। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের সম্রাট প্রথম কনস্টাইন ৩৬০ খ্রীস্টাব্দে প্রথম আয়া সোফিয়া নির্মাণ করেন। আয়া সোফিয়ার স্থানে আগে একটি প্যাগান মন্দির ছিলো। তিনি এটিকে উচ্ছেদ করে খ্রীস্টানদের জন্য কাঠের একটি গির্জা নির্মান করেন। পরে এটি একটি অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়। পরে আরেকটি আয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয়। কিন্তু সেটিও গৃহযুদ্ধের সময় অগ্নিকাণ্ডের শিকার হয়। তৃতীয়বার আরো বড় ও মজবুত করে বর্তমান আয়া সোফিয়া নির্মাণ করা হয়। আয়া সোফিয়াকে শক্তিশালীভাবে দাড় করিয়ে রাখতে তুরস্কের ইজমিরে অবস্থিত প্রাচীণ শহর এফেসাস থেকে প্রাচীন পৃথিবীর সপ্তাশ্চর্য টেম্পল অব আর্টিমিসের থেকে পাথরের খুটি নিয়ে আসা হয়।
চমৎকার নির্মান শৈলী ও অভিনব সৌন্দর্যের জন্য আয়া সোফিয়া যেমন বিখ্যাত। তেমনি রাজনৈতিক গুরুত্বের কারণে এটি অদ্বিতীয় ছিল। কারণ বাইজেন্টাইন সম্রাটের শপথ পড়ানো হতো এখানে। ১৪৫৩ সালে মুসলমানরা ইস্তাম্বুল বিজয় করলে আয়া সোফিয়া মুসলমানদের অধিনে আসে। সুলতান ফাতিহ খ্রীস্টান কর্তৃপক্ষের থেকে টাকার বিনিময়ে মসজিদটি কিনে নেন, পরে তিনি এটিকে সংস্কার করে মসজিদে রুপান্তর করেন। খ্রীস্টানরা আয়া সোফিয়া থেকে সরে গিয়ে ইস্তাম্বুলের এক প্রান্তে চার্চ অব এপিস্টলে তাদের প্রধান গীর্জা স্থাপন করে।
ওসমানী সালতানাতের প্রধান জুমা মসজিদের মর্যাদা পায় আয়া সোফিয়া। মসজিদের রুপান্তর করার কারণে গীর্জার ঘণ্টাসব কিছু জিনিস সরিয়ে ফেলা হয়। আয়া সোফিয়ার ভেতরে স্থাপন করা হয় মিহরাব, মিম্বার। তবে মসজিদের ভেতরের ঐতিহাসিক ছবি ও মোজাইকে ধ্বংস না করে তা সাদা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।
পরবর্তী সুলতানরা এটিকে আরো সুন্দর করে ও দুই পাশে দুটি মিনার স্থাপন করে আয়া সোফিয়ার মূল ভবনটিকে শক্তি জোগায়। দীর্ঘ ৫০০ বছর এখানে নামাজ পড়েছে মুসলমানরা। ঈদুল ফিতর, শবে কদর, শবে বরাত সহ ধর্মীয় উৎসবের দিনগুলোতে সুলতান এখানে আসতেন নামাজ পড়তে।
১৯৩৫ সালে দেশ ব্যাপী কট্টোর সেক্যুলারিজম চালুর অংশ হিসেবে অনেক মসজিদের মতো আয়া সোফিয়া মসজিদেও নামাজ পড়া নিষিদ্ধ করে কামাল আতাতুর্ক। পরে গ্রীস ও বৃটেনকে খুশি করাতে তাদের প্রস্তাব অনুযায়ী এটিকে জাদুঘরে রুপান্তর করে। পবিত্র এই মসজিদে জুতা পায় পর্যটকরা প্রবেশ করতো। তুর্কিস মুসলমানদের মনে খুব ক্ষোভ ছিলো কিন্তু কিছু বলার সুযোগ ছিলো না। ১৯৯১ সালে আয়া সোফিয়ার ভেতরে ছোট্ট এক রুমে নামাজ পড়ার অনুমতি দেয়া হয়। ২০১৩ সালে আয়া সোফিয়া থেকে আজান দেয়া শুরু হয়। ২০২০ সালে আয়া সোফিয়াতে আবার নামাজ পড়ার সুযোগ সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট রেজেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এরদোয়ানের সাহসী পদক্ষেপের পর ৮৫ বছর পর মুসলমানরা আবার নামাজ পড়ার অধিকার ফিরে পায়। সেই সাথে পর্যটকদের জন্যও উন্মুক্ত রয়েছে আয়া সোফিয়া।
দেড় হাজার বছরের পুরোনো আয়া সোফিয়ায় রয়েছে অনেক দুর্লভ ছবি, মোজাইক ও পাথরের নকশা। প্রবেশের পর প্রথম দেখাতেই যে কারো মন জয় করে নেয় আয়া সোফিয়া। প্রবেশের সাথে সাথেই মনে হয় যেন হাজার বছর আগের পৃথিবীতে চলে এসেছি। আপনার অপেক্ষায় আয়া সোফিয়া মসজিদ।