গালাতা ব্রিজ: গোল্ডেন হর্ণের সোনার নোলক

galata bridge istanbul tour
Dec. 18, 2024

অপরূপ ইস্তাম্বুলের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর একটি গোল্ডেন হর্ণ। বসফরাস থেকে মারমারা সাগরের একটি অংশ প্রশস্ত খালের মতো ইস্তাম্বুলের অনেক গভীরে প্রবেশ করেছে। গোল্ডেন হর্ণের প্রবেশ মুখে রয়েছে বিখ্যাত গালাতা ব্রিজ। দুই তলা এই ব্রিজ নিজেই একটি ইতিহাস। একটি পর্যটন কেন্দ্র।

 

গালাতা ব্রিজের উপর দিয়ে সড়কপথ। পথের মধ্য দিয়ে রয়েছে আবার ট্রামের লেন। রয়েছে পথচারীদের জন্য ফুটপাত। প্রতিদিন একদল লোক বড়শি দিয়ে মাছ ধরে এখানে। সব সময়ই এখানে মাছ পাওয়া যায়। গালাতা ব্রিজ থেকে একপাশে গালাতা টাওয়ার দেখা যায়, অন্য পাশে তাকালে সুউচ্চ পাহাড়ের উপর দাঁড়িয়ে আছে সুলতান সুলাইমান মসজিদ। সামনের দিকে দেখা যায় মায়াবী রহস্যেঘেরা তোপকাপি প্রাসাদ।

 

গালাতা ব্রিজের নিচ তলায় রয়েছে অভিজাত রেস্টুরেন্টের সারি। তবে মাছের আইটেমের জন্যই বেশী বিখ্যাত এখানকার রেস্টুরেন্টগুলো। পানির কাছাকাছি বসে সামুদ্রিক পাখি দেখতে দেখতে সামুদ্রিক মাছের স্বাদ নিতে পারেন আপনিও। গালাতা ব্রিজের এক পাড়ের নাম এমিনঅনু। এখানেও গোল্ডেন হর্ণে ভাসমান রাজকীয় নৌকায় মাছের  স্যান্ডউইচ খুব বিখ্যাত। দিন-রাত সব সময় লোকে লোকারণ্য থাকে গালাতা ব্রিজ।

 

শত বছরের ইতিহাসের সাক্ষী এই স্থান। আপনি শুনে অবাক হবে ১৫ শতকে তুর্কির সুলতান যখন প্রথম গোল্ডেন হর্ণে ব্রিজ বানানোর ঘোষণা দেয় বিখ্যাত ইতালীয় চিত্রকর লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি নিজে একটি ব্রিজের নকশা পাঠান। যদিও সে নকশা চুড়ান্ত বিচারে অনুমোদন পায়নি।

 

আজকের গালাতা ব্রিজ ঠিক একই স্থানে তৈরী হওয়া পঞ্চম ব্রিজ। গালাতাতে প্রথম ব্রিজ বানায় সুলতান আবদুল মজিদ তার মায়ের অনুরোধে ১৮৪৫ সালে। কাঠের তৈরী নান্দনিক সেই ব্রিজকে তখন বলা হতো জিসর --জেদিদ বা নতুন ব্রিজ। অনেকে আবার বলতো সুলতান ওলিদে ব্রিজ বা রাজমাতা ব্রিজ। পরবর্তীতে আরো বার এই ব্রিজকে নতুন ব্রিজ দ্বারা প্রতিস্থাপন করা হয়। সর্বশেষ ব্রিজটি একটি তুর্কিশ কনস্ট্রাকশন কোম্পানী ১৯৯৪ সালে নির্মাণ করে।

 

গোল্ডেন হর্ণের উপর নান্দনিক এই ব্রিজ ওঠে এসেছে তুরস্কের বহু গান, কবিতা উপন্যাসে। ব্রিজের একপাশে ফাতিহ তোপকাপি প্রাসাদ, অজস্র মসজিদ মাদ্রাসাসহ মুসলমানদের সভ্যতার তীর্থভূমি। অন্যদিকে ব্রিজের অপরপাশে কারাকোয়, বেইওলু তাকসিমে ছিল বিদেশী রাষ্ট্রদূতদের অফিস বাসস্থান। ১৮ শতকের দিকে তুরস্কের অমুসলিম অভিজাতদের একটি বড় অংশ দিকটায় বাস করতো। এই অংশটার নাম ছিল হারবিয়ে।

 

তুর্কিশ কবি পেয়ামী সাফা তাঁর ফাতিহ-হারবিয়ে উপন্যাসে বলেছেন, কেউ গালাতা ব্রিজ পার হয়ে ফাতিহ থেকে হারবিয়ে যাওয়ামাত্র একটি নতুন সভ্যতা সংস্কৃতির স্পর্শ অনুভব করবে। একসময় তাকসিমে ওসমানী সেনাবাহিনীর কয়েকটি ক্যান্টনমেন্ট ছিল। ওসমানী সেনাদল ঘোড়ায় চড়ে সামরিক কুচকাওয়াচের মাধ্যমে এই ব্রিজ পার হতো। হারিয়ে গেছে সেইসব দিন। তবুও কালের সাক্ষী হয়ে দাড়িয়ে আছে গালাতা ব্রিজ।